বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
তুরাগের বউবাজারে ফুডকোর্ট মার্কেট উচ্ছেদের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত  ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ কর্তৃক ছয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার; তিন শূন্যের ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবী গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার তুরাগের বউবাজার মার্কেট উচেছদের প্রতিবাদে মানববন্ধন ট্রাম্পের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ মিটিয়ে ফেলতে পারবেন ড. ইউনূস সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে’ সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে  প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্স’র কার্যকরি কমিটি (২০২৪-২০২৬)গঠন ১০ নভেম্বর ২০২৪ শহীদ নুর হোসেন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান রাজধানী,তুরাগে ছেলের হাতে মা খুন অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, 

স্বপ্নের পিছনে দৃঢ প্রত্যয়ে ছুটে চলা, অদম্য এক যুবকের গল্প

নিউজ: দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

রিপন কান্তি গুণ , নেত্রকোনা অফিস;

“যখন সময় থমকে দাঁড়ায়..

নিরাশার পাখি দু’হাত বাড়ায়

খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোন

কি আর করে তখন……

স্বপ্ন.. স্বপ্ন.. স্বপ্ন.. স্বপ্ন দেখে মন।”

বিখ্যাত সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী জীবনমুখী গানটি হয়তো সমীরণ কুমার সিংহ’র মতো সুখ-দুঃখের সাথে লড়াই করে টিকে থাকা মানুষদের জন্যেই লিখেছেন।

একজন সমীরণ কুমার সিংহ, পরিবারের প্রত্যাশা ও শিশুকালে স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একদিন তিনি একজন সৎ ও আদর্শবান মানুষ হবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে প্রতিবারই তার হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন চিরদিনের মতো স্বপ্নই থেকে যায়। তবুও নিরাশা-হতাশা সব পিছু ঠেলে স্বপ্নের পিছনেই ছুটে চলা তার জীবন।

জন্ম তার স্বচ্ছল প্রভাবশালী ঘরে সোনার চামচ মুখে নিয়ে হলেও কঠিন বাস্তবতা কখনোই পক্ষে ছিলোনা তার। জন্মের চার বছরের মাথায় পিতৃহীন হয়ে কাকা বাসুদেব সিংহ’র স্নেহে বেড়ে ওঠা দুর্ভাগা সমীরণ শৈশব পেড়িয়ে কৈশোরে পা রাখেন ঠিক তখনই, জীবনের সব থেকে কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। যে কাকার পিতৃ স্নেহে তিলে তিলে বেড়ে ওঠা, যিনি কখনোই পিতার অভাব বুঝতে দেননি পিতৃহীন সমীরণকে। হঠাৎ অজানা এক দূর্ঘটনায়, সেই পিতৃসম কাকা বাসুদেব সিংহ (১৯৯৪ সালের ২৮শে জুন) নিজের স্ত্রী ও চার শিশু সন্তান রেখে মৃত্যু বরণ করেন।

কথিত আছে তিনি (বাসুদেব সিংহ) ১৯৯০ এর স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ দলের পক্ষে একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে কাজ করার জন্য ১৯৯৪ সালে প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তৎকালীন ক্ষমতাশীন বিএনপি-জামাত জোটের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন তিনি।

তার কাকা বাসুদেব সিংহ’র মৃত্যুর পর অভিভাবক হারিয়ে অসহায় জীবনযাপন করেন তিনি এবং তার পুরো পরিবার। তখন সংসারের হাল ধরতে কৈশোর বয়স থেকেই জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে টিকে থাকতে চিরদিনের মতো থেমে যায় দুরন্ত কৈশোরে দেখা জীবনের সমস্ত রঙ্গিন স্বপ্ন।

নিজে সংসারের হাল ধরার পর বাবা-কাকার রেখে যাওয়া বিশাল সহায়-সম্পদ মূহুর্তেই শক্রতে রুপান্তরিত হয়ে দাঁড়ায়। অভিভাবকহীন আমার পরিবারের উপর চোখ পরে বিএনপি-জামাত জোটের কিছু চিহ্নিত ভূমিধস্যুর। সম্পদ দখলের লোভে শুরু হয় সংসারের হাল ধরা বড় ছেলে সমীরণ ও তার পরিবারের উপর অমানুষিক নির্যাতন ও অবিচার।

 

ভূমিধস্যুদের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই হাড়িয়ে ফেলেন বাবা-কাকার রেখে যাওয়া বিশাল সহায় সম্পদ। পাশাপাশি তাদের পরিবারের আশ্রয়ে থাকা বেশ কয়েকটি পরিবারসহ ডেমুরা উত্তর পাড়ায় বসবাসকারী আরও ১৫-২০ টি পরিবারও হয় গ্রাম ছাড়া। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে চির দিনের মতো ভারতে পারি জমান।

শুধু তাই নয়, তাদের পরিবার ও প্রতিবেশীর উপর হওয়া অত্যাচারে ভীতু হয়ে প্রতিবেশী গ্রামের আরও অনেক (আদিবাসী) হদি সম্প্রদায়ের অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে চিরদিনের মতো ভারতে পারি জমান।

সমীরণ কুমার সিংহ, নিজের জীবন ও জীবিকার পাশাপাশি অবসর সময়ে (আদিবাসী) হদি সম্প্রদায়ের জাতিস্বত্বার কল্যাণ জনক কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে তোলেন। নিজের জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও বারহাট্টা উপজেলায় বসবাসকারী (আদিবাসী) হদি সম্প্রদায়ের কিশোর-কিশোরীদের বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন।

 

বিপন্ন(আদিবাসী)হদি সম্প্রদায়ের জাতিস্বত্বার ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার অদম্য ইচ্ছা দেখে ২০০৮ সালের শুরুর দিকে সমতলে বসবাসরত আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করা জাতীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’-এর তৎকালীন সহ সভাপতি বাবু স্বর্ণকান্ত হাজং ও সভাপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, প্রয়াত এডভোকেট প্রমোদ মানকিন এম.পি মহোদয়ের আহ্বানে ও এলাকায় বসবাসরত আদিবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে বারহাট্টা উপজেলার কর্ণধার (চেয়ারম্যান) হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সেই থেকে অদ্যাবধি (আদিবাসী) হদি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীসহ আদিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলছেন স্বপ্নবাজ এই যুবক।

তার উন্নয়নশীল মনোভাবে, আদিবাসী সমাজে ঐক্য, সংহতি, সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলা, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় এনে দিয়াছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

বারহাট্টায় হদি সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করলে সন্তানের আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে এরকম কুসংস্কার বিশ্বাস করে যেখানে হদি সম্প্রদায় তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করতেই ভয় পেতো, সেখানে সকল কুসংস্কারকে পিছু ঠেলে সমীরণ কুমার সিংহ এর প্রচেষ্টায় হদি সম্প্রদায় এখন শতভাগ নিরক্ষর এবং বর্তমান প্রজন্ম এখন শতভাগ স্কুলমুখী। নিরক্ষরতার হার বর্তমানে শূন্যের কোঠা থেকে উন্নিত হয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২৫ শে উন্নিত হয়েছে।

তিনি শিক্ষিত আদিবাসী বেকার তরুণ তরুণীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে প্রায় ষাট জন তরুণ তরুণীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর আরও প্রায় তিনশত শিক্ষিত বেকার তরুণ তরুণীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।

এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রীদের খরচ ও উৎসাহ যোগাতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে এককালীন শিক্ষা বৃত্তি, শিক্ষা সহায়তা ও শিক্ষা উপকরণ পেতেও সহযোগিতা করে আসছেন। মাদক ও বাল্য বিবাহ নির্মূলকল্পে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে মাদক ও বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বারহাট্টার আদিবাসী সমাজকে শতভাগ মাদক ও বাল্যবিবাহ মুক্ত করে তুলেছেন।

মাদক নির্মূল, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় তিনি মিথ্যা মামলা ও হামলার শিকারও হয়েছেন। তারপরও থেমে যাননি তিনি, সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে দুস্থ ও অসহায় আদিবাসী নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় ষোলটি গৃহহীন আদিবাসী পরিবারে সেমি পাকা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়াছেন। বর্তমানে জাতিগত বিরোধ ও অপ রাজনীতিবিদ’দের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে সংগঠনটির (ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হলেও, থেমে নেই তিনি, আদিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে ছুটে চলেছেন আপন গতিতে। হয়তো তার হাত ধরেই একদিন বারহাট্টার তথা সমতলের আদিবাসী সমাজ পৌঁছাবে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে।

তিনি বারহাট্টা উপজেলা ‘ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ এর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংগঠনটির ২০১০ এর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এবং তিনি সততা ও দক্ষতার সহিত নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, বারহাট্টা উপজেলার নির্বাচিত কর্ণধার (চেয়ারম্যান) এবং পাশাপাশি উক্ত সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদে জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।

সমীরণ কুমার সিংহ, শুধু বারহাট্টা উপজেলায়ই নয়, তার আচরণ, সহযোগীতাপূর্ণ মনোভাব ও নিজ কর্মদক্ষতা দিয়ে ইতিমধ্যেই জয় করে নিয়েছেন বারহাট্টাসহ নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা, দূর্গাপুর, পূর্বধলা ও পার্শ্ববর্তী জেলা ময়মনসিংহ, শেরপুর জামালপুর ও সুনামগঞ্জে বসবাসরত গারো, হাজং, কোচ, বানাই, ডালু, ভুঁইমালী ও হদি সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হৃদয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com